পোশাকে শরতের ছোঁয়া
ট্রেণ্ডস

পোশাকে শরতের ছোঁয়া

পোশাকে শরতের ছোঁয়া-

প্রকৃতিতে বইছে শরতের হাওয়া। শরৎ মানেই শুভ্র, শরৎ মানেই সাদা মেঘের ভেলা, শরৎ মানেই কাশবন, শিউলি ফুলের মেলা। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত এই তিনের মিশ্রণ রয়েছে শরতে। শরৎকালের এই সময়টায় রং, রূপ ও বৈচিত্র্যে মৌলিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। এ কারণে শরৎ ঋতু নিয়ে রচিত হয়েছে বহু গান, কবিতা ও উপন্যাস। শরতের আবহাওয়াতেও যেন চলে লুকোচুরি খেলা। এই গরম, যে কোনো মুহূর্তেই শুরু হয় ঝমঝম বৃষ্টি। পাশাপাশি চলছে পূজা উৎসবের আয়োজন। এর প্রভাব মনে যেমন পড়ে, তেমনি পড়ে পোশাকেও। ফ্যাশন সচেতন মানুষের কাছে ঋতুভেদে পোশাকে আসে ভিন্নতা। ঋতুর এ পালাবদল মনকে যেমন দোলা দিয়ে যায়, ঠিক তেমনি ফ্যাশন ট্রেন্ডকেও আন্দোলিত করে। আর বর্তমান সময়ে ঋতুভিত্তিক পোশাকের আলাদা একটা চাহিদা রয়েছে। যে কারণে ফ্যাশন হাউসগুলো ঋতুভিত্তিক পোশাক তৈরিতে বাড়তি মনোযোগ দেয়। যে কারণে এ ধরনের পোশাকও চোখে পড়ে হরহামেশা। তবে একেক ঋতুর রং-রূপ একেক রকম। আর পোশাক তৈরিতে এ রং-রূপকেই প্রাধান্য দেয় ফ্যাশন হাউসগুলো। শুধু পোশাকেই নয়, ঘরের পর্দা, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কুশন কভারসহ সবকিছুতেই শরতে আমেজ আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

শরতের রংঃ

শরতের হাওয়ায় প্রকৃতি যেন শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আঁকা জীবন্ত এক ক্যানভাস। প্রকৃতির এই ক্যানভাসের অংশ হতে পোশাকের রংটি হওয়া চাই মানানসই। শুভ্র কাশবন আর সাদা মেঘের ভেলা আর প্রশান্ত নীল আকাশকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজাইন করা হয় শরতের পোশাক। যে ডিজাইনে প্রাধান্য পায় সাদা ও নীল রং। শরতের আছে নিজস্ব বর্ণ আর গন্ধ। দেশীয় পোশাক নকশাকারেরা সাধারণত শরতের জন্য বেছে নেন চারটি রং—সাদা, নীল, সবুজ আর সোনালি। নীল আকাশ, সাদা কাশফুল, সোনালি সূর্য আর সবুজ ফসল। শরত এলেই দল বেঁধে কাশবনে ঘুরতে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এই সময়ে যদি থাকে পোশাকে শরতের ছোঁয়া, তাহলে কেমন হয়? তাই তো ফ্যাশন হাউসগুলো নীল-সাদার সমন্বয়ে তৈরি করে রকমফের পোশাক। শুধু শাড়ি বা কামিজে নয়, শরতের অন্যান্য পোশাকেও প্রাধান্য পায় শুভ্র সাদা আর আকাশের নীলাভ রং। গাঢ় নীল, হালকা নীল, আসমানি নীল, ময়ূরকণ্ঠী নীল, রয়েল ব্লু, নেভি ব্লু আরও কত শত রং ফুটিয়ে তুলেছে পোশাকের জমিনে। সঙ্গে সাদা কিংবা অফ হোয়াইটের মিশেল ও নকশার বৈচিত্র্য—এভাবেই অনেক ফ্যাশন হাউস সাজিয়েছে শরৎ–সংগ্রহ। এর বাইরেও পোশাকে ব্যবহার হয়েছে ফিরোজা, ছাই, সোনালি, খয়েরি, সবুজ, হলুদ, কমলা,বেগুনি, গোলাপি রঙের মিশেলে সব নান্দনিক ডিজাইন। আবার শরৎ মানেই কিন্তু শারদীয় আমেজের একটা ব্যাপার থাকে। চারপাশে চলছে শারদ উৎসবের আয়োজন। আর পূজা মানেই লালের প্রাধান্য তো থাকেই। সকালের মিঠে সোনালি রোদজুড়ে থাকে শরতের আমেজ, আবার শিউলিবোঁটার যে কমলা রং, সেটা তো শরতেরই। তাই এভাবেই নতুন নতুন শরতের রং খুঁজে বেড়াচ্ছেন ডিজাইনাররা।

কেমন হবে শরতের পোশাকঃ

শরতের উষ্ণতায় আরাম আর আভিজাত্য বজায় রেখে তরুণীদের পছন্দের তালিকায় বরাবরই শীর্ষে আছে সুতি পোশাক। সুতি পোশাক সহজে ঘাম শুষে নেয়। প্রাকৃতিক তন্তুর তৈরি বলে মসৃণও হয়। তাই এখন সুতি পোশাক পরিধানের পরামর্শ দিচ্ছেন ফ্যাশন বোদ্ধারা। তবে খুব বেশি চাকচিক্যময় পোশাক নয়, সাদামাটা সুতি পোশাক বেছে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডিজাইনাররা। এ সময় কৃত্রিম তন্তুর পোশাক এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন কেউ কেউ। কেননা এ ধরনের কাপড়গুলো ঘাম শুষে নিতে পারে না। ফলে পোশাকটা শরীরে লেগে থাকে এবং যা অস্বস্তি তো বটেই, দৃষ্টিকটুও। গরমে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে মেয়েরা সাদা, হালকা গোলাপি, হালকা বেগুনি, হালকা নীল, বাদামি, আকাশি, হালকা হলুদ, ধূসরসহ হালকা রঙের পোশাকগুলো বেছে নেন। ফ্যাশন ডিজাইনাররাও এ সময় হালকা রঙের পোশাক পরিধানের ওপর প্রাধান্য দেন বেশি। আসলে গরমে সাদা ও অন্যান্য হালকা রঙের পোশাক শুধু তাপ শোষণই করে না, সেই সঙ্গে চোখকে দেয় প্রশান্তি। গরমে গাঢ় রং এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। ফতুয়ার ভেরিয়েশনও চোখে পড়ার মতো। সবচেয়ে বেশি ভেরিয়েশন রয়েছে টি-শার্টে। স্ক্রিন প্রিন্ট, কিংবা স্কেচ করা বিভিন্ন ডিজাইন ক্রেতাদের সহজেই আকৃষ্ট করবে। তরুণ প্রজন্ম টি-শার্টের বেশ ভক্ত। ভাদ্র-আশ্বিন এই দুই মাস মিলিয়ে শরৎকাল। তবে আশ্বিনের তুলনায় ভাদ্রে গরমের মাত্রা একটু বেশি। তাই শরতের পোশাক প্রস্তুতের ক্ষেত্রে কাপড়ের দিকটাও খেয়াল রাখতে হয়। যে কারণে সুতি, ভয়েল, অ্যান্ডি কটনকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কোটা এবং ধুতি কাপড়ও রয়েছে এ তালিকায়।

কুর্তি-কামিজে গরমের আরামঃ

এ সময় মেয়েদের পছন্দ সুতি কাপড়ের পোশাক। সেটা সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি বা ফতুয়া যা-ই হোক না কেন। তবে পোশাকটা যদি কামিজ হয় তাহলে সঙ্গে মানানসই রং ও ডিজাইনের সালোয়ার ও ওড়না। প্রচন্ড গরমের কারণে আরামদায়ক কুর্তা ও ফতুয়ার প্রতিও ঝুঁকছে অনেক তরুণী। জিন্সের সঙ্গে মানানসই পোশাকগুলো হতে পারে বিকালের আদর্শ। এ সময় পালাজো, লং কুর্তি, কিংবা ঢিলেঢালা কাটের পোশাকও জড়িয়ে নিচ্ছে তরুণীরা। দিনের বেলা তো বটেই, রাতের আয়োজনে নিজের পোশাকে ভিন্নতা আনতে এমন পোশাক দারুণ। এ ছাড়াও শাড়ি পরতে চাইলে সুতি শাড়িও হতে পারে এই গরমের আদর্শ পোশাক।

ট্রেন্ডি কাটছাঁটে সুতি পোশাকঃ

গরমের পোশাকে এসেছে নানা বৈচিত্র্য। তরুণীরা পছন্দমতো বেছে নিচ্ছে হাতা কাটা, ছোট হাতা এমনকি ম্যাগি হাতার কুর্তি-কামিজ। উঁচু গলার কাজকে পেছনে ফেলে এখন বেশি চলছে চারকোণা, পানপাতা ও ভি-আকৃতির গলা। আর পোশাকগুলোয় করা হয়েছে বস্নক, কারচুপি, অ্যাপিস্নক, ভরাট অ্যাপিস্নক ও অ্যামব্রয়ডারির কাজ। লম্বা কাটিংয়ের কুর্তি-কামিজের পরিবর্তে এখন বেশি চলছে মাঝারি কাটিংয়ের কুর্তি-কামিজ।

শরতের শাড়িঃ

এ সময় যারা শাড়ি পরতে চান তারা বেছে নিন হালকা রঙের শাড়িগুলো। ফিকে নীল শাড়িতে জরিপাড় দেয়া, চাঁপাফুল রং, ধানি রং, সাদা জমিনে বুটি তোলা জামদানি শাড়ি এবং এর সঙ্গে ম্যাচিং বস্নাউজ। বস্নাউজের হাতা থ্রি কোয়ার্টার হলে ভালো মানাবে। যারা সালোয়ার-কামিজ পরবেন তারাও এরকম হালকা রংগুলোই বেছে নিতে পারেন। তা ছাড়া শরৎকালের নীল রং তো রয়েছেই। এ ছাড়া শরতে সিল্ক কিংবা জর্জেট পরার উপযুক্ত সময়। আরামদায়ক হবে লিনেন, ধুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, তাঁতের কাপড়ও। জর্জেট, জয়সিল্ক, সিল্ক কাপড়ের লং কামিজ, গাউন ধাঁচের পোশাক এই সময়ের উৎসবের জন্য ফ্যাশনেবল ও আরামদায়ক।

ঘনঘোর বর্ষা শেষে এভাবেই রবীন্দ্রনাথের গানের মতো শরৎ ছড়িয়ে দেয় অরুণ আলোর ছটা। রবিঠাকুর বলেছেন, “শরতের রংটি প্রাণের রং। অর্থাৎ তাহা কাঁচা, বড় নরম। রৌদ্রটি কাঁচা সোনা, সবুজটি কচি, নীলটি তাজা। হয়তো সেই কারণেই পোশাকে সাদার পাশাপাশি অন্যান্য রংয়ের আঁচড় পড়ে।”’কবি–সাহিত্যিকেরা নানা গল্প, কবিতা, উপন্যাসে শরতের যে সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন, সেই শরতের প্রকৃতিকে অনুভবের সুযোগ এই শহরে কোনো দিনই ছিল না। এদিকে ছিল না বসন্ত বা পয়লা বৈশাখের মতো বৃহৎ আয়োজনে শরৎ উদ্‌যাপনের ঘনঘটাও। বেশ নিভৃতেই শরৎ আসত শহরে। রোদের মাঝেও বৃষ্টিধারায় শরতের সাদা মেঘ। প্রকৃতিতে শরতের এই আগমনী ছোঁয়া শহুরে জীবনে খুব একটা ছুঁয়ে না গেলেও জীবনযাপনে এর ছোঁয়াটা কিন্তু রয়েই যায়।

পোশাক বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *