ফ্যাশনে কাফতান–
বর্তমানে নারীর ফ্যাশনে কাফতান বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঘরে, অফিসে এমনকি বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানেও কাফতান পরতে পারেন। বেশ আরামদায়ক আর ফ্যাশানেবল হওয়ায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে নয়া এই ট্রেন্ড। প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে ফ্যাশন। অনেকটা জোয়ার ভাঁটা বলা যায়। কেননা পুরনো অনেক ধরনের পোশাকও নতুন করে যোগ হচ্ছে ফ্যাশনে। এর মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ওয়ে উঠেছে কাফতান। বিভিন্ন ধরনের কাপড়ে বাদুড়ের পাখার আদলে তৈরি এই পোশাকের নাম দেয়া হয়েছে কাফতান। সুতি, লিনেন, খাদি বা সিল্ক কাপড়ে হতে পারে কাফতান। বেছে নিতে পারেন পছন্দমতো। উষ্ণ আবহাওয়ায় হালকা রঙের কাফতান চোখকে আরাম দেবে, শরীরও থাকবে স্বস্তিতে। হালকা বাঙ্গি, হালকা হলুদ, হালকা নীল, গাঢ় নীল, জলপাই, ধূসর প্রভৃতি রং বেছে নিতে পারেন। লম্বা, মাঝারি (হাঁটুর নিচ অবধি) আর খাটো (টপ কাফতান) আকারের কাফতান রয়েছে। খাটো কাফতান সাধারণত উঠতি বয়সীরা পছন্দ করেন। নানা মোটিফের নকশি কাঁথার কাজ করা কাফতানও বেছে নিতে পারেন। অনেকেই বাড়িতে পরার জন্য সুতি বা লিলেনের কাফতান ব্যবহার করেন। আবার অনেকেই অফিস এমনকি বিভিন্ন পার্টিতেও বাহারি কারুকাজসম্পন্ন কাফতান পরতে পছন্দ করেন। সহজেই ক্যারি করা যায় কাফতান। সেইসঙ্গে অন্যান্য পোশাকের তুলনায় বেশ আরামদায়ক হয় কাফতান। খুবই আরামদায়ক এ পোশাকটি সব ঋতুতেই মানানসই।
বিভিন্ন ধরনের কাফতানঃ
নানা রং ও ডিজাইনের কাফতান এখন নারীর পছন্দের শীর্ষে। সুতি, লিলেন, জর্জেটসহ বিভিন্ন কাপড়ে কাফতান আপনি এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে পেয়ে যাবেন। হাঁটু পর্যন্ত ঝুল। কোমরের কাছে বেল্টের বদলে বাহারি দড়ির ব্যবস্থা থাকে। যা প্রয়োজন মতো ছোট, বড় করে নেওয়া যায়। সিল্ক, সুতি এবং মিক্সড ফ্যাব্রিকে তৈরি কাফতান ও বাজারে পাওয়া যায়। তবে গরমের কথা ভেবে সুতি বা খাদি জাতীয় ফ্যাব্রিকই বেছে নেওয়া ভাল। আবার ফুল লেন্থ কাফতানও পাওয়া যায়। কাফতানের মধ্যেও বেশ পার্থক্য আছে। কেউ পছন্দ করেন শর্ট বা টপস স্টাইলের কাফতান। আবার অনেকেই থ্রি-কোয়ার্টার কাফতান পরতে পছন্দ করেন। ফ্যাশনের খাতিরে অনেকে আবার লং কাফতানও পরেন। গর্ভবতী নারীদের কাছে কাফতান ড্রেসটি সবার পছন্দের শীর্ষে আছে।
কাফতানে আরাম, কাফতানে স্বস্তি
গরমের পোশাক হিসেবে কাফতান আদর্শ। ঘরের বাইরে ফ্যাশনেবল আর স্বস্তিদায়ক পোশাক হিসেবে স্বীকৃত কাফতান, তবে পরা যেতে পারে ঘরেও। আরামদায়ক কাপড়ের ঢিলেঢালা পোশাকটি এ দেশের আবহাওয়ায় ঘরে-বাইরে সমানভাবেই ব্যবহারোপযোগী। করোনাকালে বাসা থেকেই অফিসের কাজ করতে হচ্ছে অনেকের। মিটিং বা যেকোনো প্রয়োজনে ভিডিও কলে সহকর্মীদের সঙ্গে দেখাও করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। ফিটফাট হয়ে ভিডিও কলের জন্য ক্যামেরার সামনে বসার সময় না-ও থাকতে পারে, আবার এই অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখে বাসায় সারা দিন ফিটফাট হয়ে বসে থাকাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। এমন সমস্যার দারুণ সমাধান হতে পারে কাফতান। আয়রন করার ঝামেলা ছাড়াই কাফতান পরে আনুষ্ঠানিক ভিডিও কলে যোগ দিতে পারবেন, কাজ শেষে আরাম করে ঘুমাতেও পারবেন একই পোশাকে। পছন্দসই কাফতান যেমন কিনতে পারেন দোকান থেকে, তেমনি ঘরেও তৈরি করতে পারেন সহজে। আবার ফরমাশ দিয়ে নিজের পছন্দের নকশার কাফতান বানিয়েও নেওয়া যেতে পারে। খুবই আরামদায়ক এ পোশাকটি সব ঋতুতেই মানানসই।
কাফতানে বৈচিত্র্য
বাড়িতে খুব সহজভাবে কাফতানের নিচের অংশে কিংবা গলার দিকটার কাটে বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে। কাফতানের নিচের দিকটা প্রায় গোলাকার (সেমি সার্কুলার) হলে কেপের মতো দেখায়। গলার দিকে একটু ফাড়া থাকতে পারে, টার্সেল বা ফিতা থাকতে পারে।
- পছন্দের লকেট লাগিয়ে নিতে পারেন কাফতানের গলার কাছে।
- কাফতানের সামনের দিকে (মাঝে বা দুপাশেই) টার্সেল বসিয়ে দিতে পারেন। সুতা দিয়ে টার্সেল বানিয়ে নেওয়া যায়।
- গলা ইংরেজি ‘ইউ’ আকৃতিরও হতে পারে। গোল গলার সঙ্গে বোতামও থাকতে পারে।
- কোমরের কাছে টার্সেল বা ফিতা টানার ব্যবস্থা থাকতে পারে, যাতে শরীরে কিছুটা ‘ফিট’ করে কাফতান।
- কাফতানের নিচের দিকে অসমান কাট আনতে পারেন। জিগজ্যাগ প্যাটার্ন হতে পারে কিংবা এক পাশ বড়, অন্য পাশ ছোট করতে পারেন। আবার নিচের দিকটা একটু গোল করে কেটে ডিম্বাকৃতিও করতে পারেন।
- হাতের অংশ কেটে সুবিধামতো ছোট করে নিতে পারেন। ভাঁজ করে করে সেলাই করলেও (পিন্টেক সেলাই) হাতের অংশ ছোট হয়ে আসবে, নকশাতেও ভিন্নতা আসবে।
কাফতান পরেও স্টাইল করার উপায়
- কোমরে একটি বেল্ট ব্যবহার করুন। যেহেতু কাফতান অনেক ঢিলা হয়ে থাকে; তাই বেল্ট পরলে কোমরের দিক থেকে বেশ সুন্দর ও মানাসই দেখাবে। এটি স্টাইলে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে।
- কোনো উৎসবে বা অনুষ্ঠানে কাফতান পরলে এর সঙ্গে অনেক জুয়েলারি পরতে পারেন। বিশেষ করে কাফতানের সঙ্গে সিলভার জুয়েলারি বেশ মানিয়ে যায়।
- অফিসে বা আউটিংয়ে কাফতান পরলে এর সঙ্গে স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন। এটা লুকটাই চেঞ্জ হয়ে যাবে। বেশ সুন্দর দেখাবে।
এই গরমে নিজের কালেকশনে রাখতে পারেন একটি কাফতান। আগের মতো শপিং মল কিংবা দোকানে দোকানে ঘুরে কেনাকাটিও করতে পারছে না শপিং পাগল বাঙালি। কিন্তু অনলাইন কেনাকাটি তো করাই যায়। এখন এই ট্রেন্ড চলছে। তাই নিজের কালেকশনে কাফতান রাখতে অনলাইনে ঢুঁ মারতে পারেন। মোদ্দা কথা ফ্যাশনে কাফতান এখন নয়া ট্রেন্ড মেনে কিনে ফেলতে পারেন কাফতান। আবার আপনি চাইলে নিজে অর্ডার দিয়ে তৈরি করাতে পারেন আরামদায়ক অথচ ফ্যাশনেবল এই পোশাক।
পোশাক বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ