পূজার সাজসজ্জায় বৈচিত্র্যতা
সাজগোজ

পূজার সাজসজ্জায় বৈচিত্র্যতা

পূজার সাজসজ্জা

উৎসব মানেই আনন্দ, সাজসজ্জা, নতুন পোশাক পরা, ঘুরে বেড়ানো। দুর্গাপূজার আয়োজন চলতে থাকে কয়েকদিন ধরে। প্রতিদিনের উৎসবের সাজেই থাকা চাই ভিন্নতা। তাই শুরু থেকেই যদি একটি প্ল্যান করে নেওয়া যায় যে কোন দিন কী ধরনের পোশাক পরবেন বা কীভাবে সাজিয়ে তুলবেন নিজেকে তাহলে পূজার উৎসবের দিনগুলোতে সাজের ভিন্নতা রাখতে পারবেন খুব সহজেই। এবারের পূজার সময়টায় কিছুটা গরমের আমেজ থাকবে তাই পূজামণ্ডপে সারাদিন আপনার উপস্থিতির ক্ষেত্রে সুতি পোশাকটাই স্বস্তিদায়ক হবে। 

সাজগোজঃ

পূজোর সময় হালকা গরম থেকেই যায়। তাই সকালে অঞ্জলি দেবার জন্য হালকা সুতির পোশাক আরামদায়ক। আর যারা শাড়ি পড়তে চান গরদ বা তসরের শাড়ি অঞ্জলির জন্য বেশ ভালো। তার সঙ্গে যদি বেছে নেন মানানসই গোল্ড প্লেটের গয়না তাহলে দারুন মানাবে। একটা ট্র্যাডিশনাল খোঁপা তার একধারে বেলিফুলের মালা হলে দারুণ লাগবে। এছাড়াও পোশাকের সঙ্গে যদি গাঢ় চোখের মেকআপ চান করতেই পারেন। তবে সেক্ষেত্রে ঠোঁট হবে হালকা ম্যাট ফিনিশ। আর যদি লিপস্টিকের রঙ গাঢ় চান তাহলে অ্যাই মেকআপটা হালকাই ভালো লাগবে। চোখে শুধু মোটা করে কাজল ভালো লাগবে। তবে যারা গয়না পড়তে ভালোবাসেন তারা এইসময় জাঙ্ক গয়নার পরিবর্তে একটু ট্র্যাডিশনাল গয়না। বা এথনিক গয়না পড়লে বেশি ভালো লাগবে পূজোর সময়।

চুলের সাজসজ্জাঃ

চুল বাঁধায় অনুসরণ করতে পারেন নানা রকম ঢং। এখানে চুল টুইস্ট করে ঢিলেঢালা বেণি যেমন দেখা যাবে, তেমনি মাঝে সিঁথি করে টান টান করা খোঁপা বাঁধার ধারাও থাকবে। খোঁপা করা চুলের ওপর সাদা ফুল অনেকটা মুকুটের মতো করেই বসানো। আবার কপালের ওপর লাগানো কৃত্রিম চুলের চিকন বেণি নিয়ে এসেছে বোহিমিয়ান লুক। চোখ সাজানোয় যত্ন থাকুক। কারণ, এবার সেটাই নজর কাড়বে বেশি। গয়নার নীল রং একজনের চোখের সাজে নিয়ে এসেছে আধুনিকতা। আবার একই ভাবে টানা চোখে ধরা পড়েছে ঐতিহ্যের ছোঁয়া। শাড়ির সঙ্গে হাতভর্তি চুড়িতে সাজ সম্পূর্ণ।

মেকআপঃ

স্নিগ্ধ সাজেই শুরু হোক পূজার দিনগুলো। মেকআপের শুরুতে মুখ পরিষ্কার করে সানস্ক্রিন লোশন লাগাতে ভুলবেন না। কারণ দিনে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। পোশাকের সাথে মেকআপটাও মানানসই হওয়া চাই। দিনের সাজটা হালকা রাখুন। ভারী ফাউন্ডেশন ব্যবহার না করাই ভালো দিনের বেলা। গরমে মেকআপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এতে। তাই হালকা পাউডার বেজড মেকআপ ব্যবহার করুন। দিনের উৎসবে বেজ মেকআপ হতে হবে হালকা। অবশ্যই স্কিন টোনের সাথে মিল রেখে ব্লাশন। সকালের মেকআপে হাইলাইটার ব্যবহারের দরকার নেই। পূজার সাজসজ্জা তে হালকা মেকআপের এই লুকে আপনি হয়ে উঠবেন অসাধারণ।

চোখের মেকআপঃ

যেহেতু দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা। তাই পূজার সাজসজ্জা তে বাঙালি লুকটাই গুরুত্ব পায়। আর পূজা যেহেতু গরমের সময় তাই হালকা মেকআপই ভালো লাগবে। আইশ্যাডের ক্ষেত্রে ব্রাউন, ব্রোঞ্জ, গোল্ডেন, কপার এবং চাহিদা অনুযায়ী আইলাইনার ও ২/৩ কোট মাশকারার প্রলেপ দিন। যা এ সময়ের জন্য উপযুক্ত। মনে রাখবেন, আইব্রুর শেপ ও আইলাইনার দেওয়ার ধরন আপনার ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করবে।

লিপস্টিকঃ

চোখের মেকআপকে গুরুত্ব দিতে চাইলে ঠোঁটকে হালকা রাখতে হয়। আবার একটু গ্লসের ব্যবহারেই হালকা লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁটটাই বেশি গুরুত্ব পেয়ে যায়। কিন্তু এই গরমের সময় পূজোর দিনের সাজ লিপগ্লস একদমই বেমানান। তাই বুঝে নিন কোনটি আপনার জন্য মানানসই। একপ্যাচে লাল সাদা গরদ শাড়ি, চুলের সাজে খোপা বা বেণী বা খোলা রাখা লম্বাচুল, সিঁথিতে সিঁদুর, কপালে লাল টিপ, হাতে শাখা—এ সাজে খুব সহজেই আমরা ঠোঁটে লাল লিপস্টিকই ভাবি। আবার এই ধরনের সাজের সাথে সালোয়ার-কামিজ বা ফতুয়াকে পোশাক হিসেবে ভাবা যায় না। অর্থাত্ ঠোঁটের লিপস্টিকের শেড অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষঙ্গঃ

সিঁথিতে সিঁদুর দেওয়ার ভিন্ন ভিন্ন ধরন আছে কিন্তু বিবাহিত মেয়েদের কাছে সিঁথিতে সিঁদুর কেবলমাত্র সাজের অনুষঙ্গ নয়। হাতের শাঁখা-পলাও ঠিক তেমনই গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রত্যেক বিবাহিত নারীর কাছে। প্রতিটি অনুষঙ্গের বিশেষত্বকে বুঝে ভেতরে ধারণ করে যদি তার প্রকাশ ঘটাতে পারলেই তার পূর্ণতা আসে। কানের দুল, গলার মালা, নাকের নথ, খোপার কাঁটা—সবই নির্ভর করে সাজের বিশেষত্ব, পোশাকের ধরন এবং মানুষটির পছন্দ ও ব্যক্তিত্বের ওপর।

পূজায় রাতের সাজগোজঃ

সন্ধ্যার পর পূজার জন্য একটু গাঢ় করে সাজতে পারেন। তাই রাতের মেকআপ একটু ভালো করে করে নিন।সন্ধ্যার পর পূজার জন্য একটু গাঢ় করে সাজতে পারেন। তাই রাতের মেকআপ একটু ভালো করে করে নিন।

ছবিঃ পূজায় সাজগোজ
  • প্রথমে চোখের আশপাশে এবং দাগ থাকলে সেটা ঢাকার জন্য কনসিলার ব্যবহার করে তা ঢেকে নিন। এর উপরে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে স্পঞ্জ করে বেইস মেকআপ করে নিন।
  • এর উপর ফেইস পাউডার দিন। এবার ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে আরও একবার ভালো করে ব্লেন্ড করুন।
  • সিলভার রংয়ের হাইলাইটস দিয়ে একটু গাঢ় রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করুন রাতের সাজে। আইলাইনার ও কাজল দিয়ে মোটা করে চোখ আকিয়ে নিন। চোখের পাপড়ি ঘন ও বড় দেখানোর জন্য ২-৩ বার মাশকারা ব্যবহার করুন।
  • চোখের মেকআপ গাঢ় হলে লিপস্টিকের রঙ হালকা দেয়ার চেষ্টা করুন।
  • পোশাক ও সাজের সঙ্গে মানানসই করে চুলের স্টাইল করে নিন। খোঁপা, লম্বা বেণী, খোলা চুলেও বেশ লাগবে। এছাড়া চুল স্ট্রেইট বা কার্ল করেও স্টাইল করতে পারেন। পূজার সময় চুলে ফুল থাকা ভালো। তাই যে স্টাইলই করুন না কেন চুলে ফুল গুঁজে নিন।
  • পোশাকের সাথে মিলিয়ে গহনার প্রতিও নজর দিন। মেটালের গহনা বেশ ভালো লাগবে রাতের বেলা।

দশমীর সাজঃ

পূজার প্রাণ হলো বিজয়া দশমী। দশমীতে সবাই সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। দশমীতে লাল-সাদা শাড়ি পরতে পারেন। এদিন চোখে উজ্জ্বল রং ব্যবহারের মাধ্যমে স্মোকি লুকে সাজাতে পারেন। সঙ্গে মোটা করে কাজল, আইলাইনার ও মাসকারা ব্যবহার করুন। গালে ব্লাশন ও ঠোঁটে গাঢ় রঙের লিপস্টিক দিন। খোঁপা কিংবা খোলা চুলে জড়িয়ে নিন তাজা ফুল।

জুতাঃ

পূজার পোশাকের সাথে জুতা বাছাই করার সময় আরামের কথাও ভাবতে হবে। পূজা দেখার সময় অনেক হাঁটতে হয়, তাই আরামদায়ক স্যান্ডেল পরুন। পূজামণ্ডপে যাওয়ার জন্য যদি অনেকটা হাঁটার প্রয়োজন হয়, তাহলে হিল এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। রাতের দাওয়াতে যাওয়ার জন্য বেছে নিতে পারেন মানানসই হিল জুতা।

ছেলেদের সাজঃ
পূজার শুরুর দিন গুলোতে ছেলেরা হালকা রং এর পাঞ্জাবি ও পায়ে আরামদায়ক ফিতে যুক্ত স্যান্ডেল পরতে পারেন। আর শেষ দিন গুলোতে জমকালো পাঞ্জাবি, ফতুয়া পছন্দ করতে পারেন। যারা একটু অন্যভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে চান তারা ধুতি পরতে পারেন। ছেলেরা চুলে জেল ব্যবহার করে এ দিন ভিন্ন লুক আনতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন স্টাইলের আংটি ও ব্রেসলেট পাওয়া যায়, পরতে চাইলে হাতের জন্য পছন্দমতো ও মানানসই বেছে নিতে পারেন।

উত্সবের ফ্যাশনে শুধু নতুনত্বই নয়, ঐতিহ্যের ছোঁয়া আছে বলেই উত্সবের সাজে সার্বজনীনতা খুঁজে পাওয়া যায় সহজেই। পূজার দিনগুলোতে সুন্দর থাকুন, সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা। পোশাক বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুকগ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদেরপেইজ

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *