কাপড়ের যত্ন-
কাপড়কে সাদা ও ঝলমলে রাখতে বিশেষ কোন দামী জিনিসের প্রয়োজন পড়ে না। বরং কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। কাপড় দীর্ঘদিন সুন্দর ও পরিপাটি রাখতে হলে আপনাকে কাপড়ের যত্ন নিতে হবে। শাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়েস্টার্ন পোশাকের নিয়মিত পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। একমাত্র সঠিক যত্ন ও পরিচর্যায় পোশাক দীর্ঘদিন ভাল থাকে। পোশাকের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বর্ষাকালে। এই মরশুমের স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় পোশাকের খুবই ক্ষতি করে। সিন্থেটিক ফেব্রিকে ফাঙ্গাস জন্মায় না। কিন্তু সিল্ক, সুতি বা তসর অনেকদিন নাড়াচাড়া না হয়ে পড়ে থাকলে তার তন্তুর গায়ে জীবাণু জন্মাবে। সিল্কের গায়ে সবথেকে দ্রুত সিলভার ফিশ লাগে। কারণ সিল্কের তন্তুর মধ্যে থাকে প্রাণীজ প্রোটিন। এই ধরনের পোকার প্রিয় খাবার হল এই প্রাণীজ প্রোটিন। তার মানে বুঝতেই পারছেন পোশাকের যত্নের কতটা প্রয়োজন? যেমন পরতেও হবে, একইভাবে জামাকাপড়ের যত্নও সঠিকভাবে নিতে হবে।
সুতি কাপড়ের যত্নঃ
ঠাণ্ডা পানিতে পরিষ্কার করুন সুতি পোশাক। জামার লেবেলে যদি বারণ না করা থাকে তাহলে সাদা পোশাকের দাগ ওঠানোর জন্য ক্লোরিন ব্লিচ ব্যবহার করতে পারেন। সুতির জামা ইস্ত্রি করার আগে পানি ছিটিয়ে নিন। এতে কাপড় মসৃণ হবে। অনেকদিন ব্যবহার না করে রেখে দিলে কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে পোকা হয়। তাই আলমারিতে ন্যাপথালিন বা নিমপাতা রাখুন।
সিল্ক কাপড়ের যত্নঃ
সিল্ক ড্রাই-ক্লিন করতে পারেন অথবা সাধারণভাবে পরিষ্কার করতে পারেন। ঠাণ্ডা পানি ও লিকুইড সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন সিল্ক পরিষ্কারের জন্য। রঙিন সিল্কের পোশাক থেকে অনেক সময় রঙ উঠতে পারে। সেরকম পোশাক ড্রাই-ক্লিন করাই ভালো। দাগ তোলার জন্য সিল্কের একটা অংশ কখনওই বেশি করে ঘষবেন না, তাতে রঙ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সিল্কের শাড়ি অনেকদিন রেখে দিলে ভাঁজে ভাঁজে কেটে যায়। কার্ডবোর্ডে শাড়ি রোল করে রেখে দিলে এই সমস্যা আটকানো যাবে।
উলের পোশাকের যত্নঃ
খুব কড়া ডিটারজেন্ট ব্যবহার করলে উলের পোশাক নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোমল ডিটারজেন্ট বা লিকুইড সাবান ব্যবহার করুন। শুকনোর সময় সরাসরি সূর্যের তাপ থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন।
লিনেন কাপড়ের যত্নঃ
লিনেন পানিতে ধোওয়ার আগে পোশাকের লেবেলে দেখে নিন ড্রাই-ক্লিন করতে বলা রয়েছে কিনা। পোশাকের রঙ অনুযায়ী পানির তাপমাত্রা ঠিক করুন। লিনেন অন্য কাপড়ের চাইতে বেশি পানি শুষে নেয়, তাই রঙ ওঠে এমন কাপড়ের সঙ্গে ভেজাবেন না। ইস্ত্রি করার সময় পোশাক উল্টো করে করবেন। স্টিম আয়রন লিনেনের জন্য ভালো।
পলিয়েস্টার কাপড়ের যত্নঃ
বেশিরভাগ পলিয়েস্টারের জামাই ওয়শিং মেশিনে গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। প্রয়োজনে ক্লোরিন ব্লিচ ব্যবহার করতে পারেন। তবে টাম্বল ড্রাই করলে সেটা কম তাপমাত্রায় করতে হবে। জামায় ভাঁজ পড়ে যাওয়া আটকাতে অল্প ভেজা অবস্থাতেই ড্রায়ার থেকে বের করে নিন। ইস্ত্রি করতে হলে সবসময়ই কম তাপমাত্রায় করতে হবে, কারণ খুব গরম ইস্ত্রি লাগলেই পলিয়েস্টার নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রতিদিনের পোশাক আলনায় নয়ঃ
কাপড়চোপড় আলনায় না রেখে চেষ্টা করুন আলমারি ব্যবহার করতে। আলনায় ঝুলিয়ে রাখলে পোশাকের বিশেষ অংশের উপর চাপ পড়ে। ফলে আলনার রডের সঙ্গে লেগে থাকা অংশে হ্যাঙ্গিং লাইন তৈরি হতে পারে। ক্ষতি হয় ওই জায়গার সুতার অংশে। তার চেয়ে ন্যাপথলিন বা কালো জিরা বা শুকনো মরিচ বা নিম পাতা ছড়িয়ে আলমারিতে রাখুন।
ডিটারজেন্ট বা সাবানঃ
কাপড় কাচা মানেই পরিষ্কার পানিতে সাবান দিয়ে ধোয়া। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গরম পানিও ব্যবহার করা হয়। প্রায় সব ধরনের ডিটারজেন্ট বা লিকুইডে কম-বেশি একই রাসায়নিক থাকে। মূলত ফসফেট, কার্বনেট ও সোডিয়াম স্যালিকেট। এসব রাসায়নিকের অণুগুলোর একাংশ ‘ওয়াটার লাভার’। যা সহজেই পানিতে মেশে। অপর অংশ কিন্তু ‘ওয়াটার হেটার’। যা মেশে তেলের সঙ্গে। বিভিন্ন রকমের ডিটারজেন্টের হিসেব আলাদা-আলাদা হয়। কাজেই কোন ধরনের পোশাকের জন্য কী সাবান বাছবেন, সেটাও সাবানের কম্পোজিশন দেখে ঠিক করুন।
জামা কাপড় নিয়মিত রোদে দিতে হবেঃ
শীত আসার পর গরমের পোশাকগুলি ভাল করে রোদে দিয়ে নিন। তারপর সেগুলি আলতো ভাঁজে আলমারিতে তুলে রাখুন। রোদ্দুর অনেকরকম ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে দেয়। তবে রোদ থেকে তুলে অবশ্যই জামা কাপড় ঠান্ডা করে নেবেন। তারপরই আলমারিতে তুলবেন। মাসে অন্তত একবার সব জামাকাপড় রোদে দিন। এইভাবেই জামা কাপড়ের যত্ন নিন।
জামা কাপড়ের ভাঁজ বদলানঃ
একই ভাঁজে দীর্ঘদিন শাড়ি বা জামা কাপড় রেখে দেওয়া খারাপ। তবে সেই ভাঁজে ভাঁজেই শাড়ি বা জামা কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। ফেব্রিক খারাপ হয়ে যায়। সিল্কের শাড়ি দীর্ঘদিন এক ভাঁজে রেখে দিলে শাড়ি সেই ভাঁজে ভাঁজে ছিঁড়ে যায়। তাই আলমারি থেকে পোশাক বের করে তা সম্পূর্ণ ভাবে খুলে নিন। কিছুক্ষণ রোদে দিন। রোদ থেকে তুলে ভাল করে ঝেরে নিন। এরপর ভাঁজ পাল্টে আলমারিতে আবার তুলে রাখুন। জামা কাপড়ের যত্ন (take care of clothes)করুন।
প্রাত্যাহিক কিছু অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ
দৈনিক গোসল করুন, সুগন্ধি ব্যবহার করুন এবং উপযুক্ত অন্তর্বাস ব্যবহার করুন। এই অভ্যাসগুলো আপনার কাপড়কে পরিষ্কার ও ভালো রাখবে।
বেসিক মেরামতের পদ্ধতি জেনে রাখুনঃ
কাপড়কে দীর্ঘদিন ভালো রাখতে হলে নিজেই কিছু ছোট খাট কাজ শিখে নিন। যেমন- বোতাম লাগানো, জিপার লাগানো, লুজ থাকলে তা নিজেই সেলাই করে নিন। এতে আপনার টাকাও বাচঁবে।
কাপড় সংরক্ষণ করাঃ
অনেকদিন পর্যন্ত ময়লা কাপড় জমিয়ে রাখবেন না। পরিষ্কার করে সেলফে, ড্রয়ারে অথবা আলমারিতে সংরক্ষণ করুন। জ্যাকেটের জিপারগুলোকে কয়েকদিন পর পর মোম দিয়ে ঘষবেন অথবা নারিকেল তেল দিয়ে রাখেবন। নাহলে জিপারে জ্যাম হয়ে যায়। কয়েকদিন পর পর আলমারির কাপড় বের করে ১-২ ঘন্টা রোদে দিয়ে আবার আলমারিতে সংরক্ষণ করুন।
আরও কিছু তথ্যঃ
• সিল্কের শাড়ি বা শার্ট এগুলো বেশি দিন রেখে দিলে বিবর্ণ হয়ে যায়। তাই দামি পোশাক মাঝেমধ্যে ঘরে পরুন, ছবি তুলুন এতে মনও ভাল থাকবে।
• হালকা রোদে রাখুন জামাকাপড়।
• শিফন ও জর্জেটের পোশাকে সেফটিপিন আটকাবেন না। তাই মুড়েই রাখতে হবে। নরম ডিটারজেন্টে শ্যাম্পু মিশিয়ে হাতে কাচতে হবে।
• অন্য কোনও কাপড়ের সঙ্গে নয়, সিল্কের পোশাক আলাদা রাখতে হয়। জরি অংশ মলমল দিয়ে ঢেকে রাখুন।
• ছত্রাক থেকে বাঁচতে আলমারিতে সিলিকা জেল পাউচ রাখতে হবে।
• দামি পোশাকের উপরে সুগন্ধি ব্যবহার করবেন না। তুলায় ভ্যানিলা এসেন্স জাতীয় পদার্থ দিয়ে আলমারির চারটি কোণে রেখে দিতে পারেন।
• আলমারির প্রতিটি কোণে পরিষ্কার কাপড়ে পুঁটলি করে বা টিস্যু পেপারে মুড়ে ন্যাপথালিন রেখে দেওয়া যেতে পারে।
• করোনা আবহে সুতির কাচা কাপড়গুলো কড়া করে ইস্ত্রি করুন।
পোশাক বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ