বাহারি খোঁপায় সাজ-
চুল লম্বা হোক কিংবা ছোট চুলের যে সাজটি আপনাকে অনন্য করে তুলতে পারে তা হচ্ছে খোঁপা। বঙ্গ ললনার কাছে ইদানিং এই খোঁপা বাঁধা স্টাইল বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। একটু উঁচুতে কপালে টিপ আর পাফ করে বা বল খোপায় মুখটা ভরাট লাগে। সঙ্গে শাড়ি বা চুড়িদার, যে কোনোটাই মানানসই। আপনার চেহারা থেকে শুরু করে এটি আপনার ব্যক্তিত্বেও আনে আলাদা গুরুত্ব। আপনি শুধুমাত্র বাহারি খোঁপার সাহায্যে নিজেকে একদম আলাদা ভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। একটু কায়দা করে পরিচিত সব খোঁপাকেই বিভিন্ন স্টাইলে বেঁধে নেওয়া যাবে। মানিয়ে যাবে সব পোশাকের সঙ্গে, সব জায়গায়, সব পরিবেশে। এক সময় নারীদের কেশবিন্যাসে খোঁপার বাহার ছিল দেখার মতো। বিভিন্ন আঙ্গিকে সাজিয়ে তোলা হত খোঁপা। রূপবিশেষজ্ঞ তানজীমা শারমিন মিউনি জানান, “আগের দিনে পরিপাটি করে চুল বাঁধা মানেই যেন খোঁপা করাকে বোঝানো হত। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, এইতো বিংশ শতাব্দীর শুরুতেও গ্রামবাংলার নারীদের ‘পরিপাটি’ চুল আর ‘খোঁপ করা’ চুল এ দুইয়ের মধ্যে অর্থের তেমন কোনো পার্থক্য ছিল না। তখন একেক খোঁপার সাজ ছিল একেক রকম। বড় বড় খোঁপা মানে ছিল নারীর শৈলী ও মননে রুচিশীলতার ছাপ। “যত বড় খোঁপা, তত বেশি ভাব”– এরকম একটি কথাও প্রচলিত ছিল। মধ্যযুগে অমৃতিপাক, লোটন, পান, টালি, খেজুরছড়ি, এলোকেশী, বিনোদবেণী, প্রজাপতি ইত্যাদি খোঁপার নামের সন্ধান পাওয়া যায়। বিখ্যাত ছিল ‘শান্তিপুর’ নামের একটি খোঁপার স্টাইল। “উলার মেয়ের কলকলানি/ শান্তিপুরের চোপা/ গুপ্তিপাড়ার হাতনাড়া আর/ বাঘনাপাড়ার খোঁপা”। গ্রামে-গঞ্জে এরকম অনেক মজার মজার কথা শুনতে পাওয়া যায়। এগুলো অনেকদিন ধরেই প্রচলিত ছিল বাংলায়। আবার খেয়াল করুন, ‘বিনোদবেণী’ একটি খোঁপার নাম, যে খোঁপায় মুগ্ধ হয়ে নজরুল গেয়েছিলেন –
“সই ভালো ক’রে বিনোদ–বেণী বাঁধিয়া দে
মোর বঁধু যেন বাঁধা থাকে বিননী–ফাঁদে।”
অনেকেই বলবে ওল্ড ইস গোল্ড৷ পুরনো স্টাইল বারবার ফিরে ফিরে আসে। আসলে ফিরে তখনই আসে, যখন নতুনদের মধ্যে প্রচলন হতে থাকে। আলিয়া ভাট, দীপিকা পাডুকোন-সহ বহু নায়িকাই ফিরিয়ে এনেছে পুরনো স্টাইল। তাই নিজেকে আলাদাভাবে সাজিয়ে তুলতে চাইলে চটপট বাহারি খোঁপায় নিজেকে বদলে নিন।
প্লেইন খোঁপাঃ
খোঁপাটা যেহেতু গোল হবে তাই মাথার সামনের চুল ফুলিয়ে নিন। সামনের চুলগুলোতে চেহারার গড়ন অনুযায়ী সেট করুন। ইচ্ছে করলে বেণি করেও নিতে পারেন। এবার পেছনে সব চুল রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকে নিন। আটকানো সব চুলের একপাশে একটু চুল রেখে বাকি চুল দিয়ে সাধারণ হাতখোঁপা করুন। এবার খুলে রাখা বাকি চুলগুলো খোঁপার উপর দিয়ে ঢেকে ক্লিপ লাগিয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন, চুল যেন ভালো করে আটকানো হয়। প্রয়োজনে হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করে একটু শক্ত করে নিতে পারেন।
বিরা খোঁপাঃ
সাইড বা মাথার একপাশে সিঁথি করে চুল আঁচড়ে নিন। সামনের চুল মুখের সঙ্গে মানিয়ে সেট করুন। এবার বাকি চুল পনিটেইল করে বেঁধে নিন। বাঁধা চুলগুলো ৩ ভাগে ভাগ করুন। প্রতি ভাগ চুল ধরে গোল করে পেঁচিয়ে ক্লিপ দিয়ে আটকান। এমনভাবে আটকাতে হবে যেন এক ভাগের পাশাপশি আরেক ভাগ থাকে। ইচ্ছে করলে খোপার মাঝখানে কাটা ব্যবহার করতে পারেন।
কার্ল আপডুঃ
যাদের চুল কার্লি তাদের জন্য এটি একটি পারফেক্ট খোঁপা। মাঝারি থেকে বড় সাইজের চুলে এটি করা যায়। তবে যাদের চুল সোজা তারাও এটি করতে পারবেন। এটি এলোমেলো খোঁপা নামেও অনেকের কাছে পরিচিত।
গ্রেসিয়ান আপডুঃ
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটি গ্রিসের একটি জনপ্রিয় খোঁপা। তবে আমাদের দেশেও এটি এখন অনেক চলছে। শাড়ির সাথে দারুণ মানিয়ে যায় এ খোঁপাটি। তরুণী অথবা মধ্যবয়সী যে কোনো নারী এ খোঁপাটি করতে পারেন।
ভালেন্টাইন আপডুঃ
খুবই সুন্দর একটি খোঁপা এটি। তরুণীরা লং ড্রেসের সাথে আনায়সে এটি ট্রাই করতে পারেন। অনেকে আবার এটির সাথে সামনের চুলগুলো কার্ল করে থাকেন। খোঁপার প্রতিটা অংশে স্টোন বা বিডস লাগাতে পারেন গরজিয়াস লুকের জন্য।
হাফ আপডুঃ
যারা চুল খোলা রাখতে পছন্দ করেন তাদের জন্য খুব সিম্পল এ স্টাইলটি। সামনে দিয়ে চুল অনেক খানি টিজ করে উচু করা হয়। তারপর সফট কার্ল করে পেছনের চুল গুল ঘাড়ের কাছে এনে ছেড়ে রাখা হয়। এটি আসলে সত্তর দশকের খুব জনপ্রিয় একটি হেয়ার স্টাইল।
হাফ আপডু উইথ কার্লঃ
যারা গতানুগতিক ধারা থেকে বের হতে চান না তাদের জন্য এই হেয়ার স্টাইলটি। এটি উপরের হেয়ার ডু এর মতোই কিন্তু এখানে মাথার পেছনের চুলগুলো রোলার বা কার্লার দিয়ে কার্ল করা হয়। শাড়ি এবং কামিজ দুটোর সাথেই এটি ভালো যায়।
এভাবে শতাব্দীকাল ধরে বাঙালি নারীর চুলের সাজ এবং তার সাথে ঐতিহ্যবাহী সাজসামগ্রী হয়ে থাকুক বঙ্গকন্যাদের সৌন্দর্য ও অস্তিত্বের অনন্য প্রতীক। আজ এটুকুই। ভালো থাকুন, বাংলাকে ভালোবাসুন।
পোশাক বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ