শাড়ির যত্ন-
শাড়িতেই পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে বাঙালি নারীর সাজসজ্জা। সবসময়ের ব্যবহারে অথবা শখের বশে অনেকেই শাড়ি পরে থাকেন। শাড়ির যত্ন ঠিক মত না নিলে কিন্তু শাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যেমন, বর্ষাকালে শাড়িতে ফাঙ্গাস হয়ে যায়, ভাঁজে ভাঁজ পরে শাড়ি ছিঁড়ে যায়, অনেক সময় অনেকদিন ধরে একভাবে থাকতে থাকতে শাড়ির রঙও নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে আবার শখের শাড়িটি যত্ন করে তুলে রাখেন। তবে শাড়ি শুধু পরলেই হবে না, পাশাপাশি নেয়া চাই এর সঠিক যত্ন। নয়তো নষ্ট হয়ে যেতে পারে আপনার শখের শাড়িটি। চলুন জেনে নিই শাড়ির যত্ন কীভাবে নেবেন তার কিছু টিপস।
- সুতি ছাড়া অন্য ধরনের শাড়ি ড্রাই ক্লিন করতে পারলে ভালো হয়।
- শাড়ি ধোয়ার সময় ব্রাশ দিয়ে বেশি ঘসাঘসি করবেন না।
- তাঁত, কটন ও লিনেনের শাড়ি প্রথমবার ধোয়ার আগে খনিজ লবণ মিশ্রিত পানিতে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এতে রঙ দীর্ঘস্থায়ী হবে।
- লিনেন, জর্জেট বা শিফনের শাড়ি নরম ডিটারজেন্টে শ্যাম্পু মিশিয়ে হাতে কাচুন। ওয়াশিং মেশিনে ডেলিকেট মোডেও কাচতে পারেন। তবে নিংড়ে পানি ঝরাবেন না। রোদে না দিয়ে ছায়ায় শুকান এই ধরনের শাড়ি।
- শাড়ি ইস্ত্রি (প্রেস) করার সময় কাপড়ের ধরন অনুযায়ী টেম্পারেচার ঠিক করে নিন।
- শাড়ির উপর নরম সুতির কাপড় রেখে মাঝারি তাপে ইস্ত্রি করুন এবং অবশ্যই উল্টো দিক থেকে।
- সুতির শাড়ি হালকা মাড় দিয়ে ইস্ত্রি করলে ভালো থাকবে।
- যে শাড়িগুলো বেশি পরা হয়না, সেগুলো মাঝে মধ্যে বের করে রোদে দিবেন।
- কিছুদিন পরপর শাড়ির ভাঁজ বদলে রাখবেন।
- বেশিদিন শাড়ি একই ভাঁজে থাকলে সে জায়গা থেকে ফেঁসে যেতে পারে।
- শাড়ি ভাঁজ করে রাখলে উপরে ও নীচের প্রতিটি ভাঁজের ভিতর ট্রেসিং পেপার রাখা যেতে পারে।
- বেশি দিন এক ভাঁজ রাখলে জরির কাজ, এমব্রয়ডারি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি প্লাস্টিকের ব্যাগে শাড়ি রাখলেও সূক্ষ্ম কাজগুলো কালচে হয়ে যেতে পারে।
- সুতি ও লিনেন শাড়ি হালকা ভাঁজ করে কাঠের হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রাখুন।
- জামদানি শাড়ি একই ভাঁজে দীর্ঘদিন রাখবেন না। এতে ভাঁজের অংশ ফেটে যেতে পারে। কাপড় পেঁচানোর রোলারে পেঁচিয়ে রাখুন জামদানি শাড়ি। মাঝে মাঝে রোদে দেবেন।
- জামদানি শাড়ি ড্রাই ওয়াশ করান। অনেকদিন ব্যবহারে যদি শাড়ি নরম হয়ে যায় তাহলে কাটা করিয়ে নিন।
- সিল্কের শাড়ির ঔজ্জ্বল্য ফেরাতে পাঁচ লিটার পানিতে পাঁচ চামচ সাদা ভিনিগার মিশিয়ে নিন। এই দ্রবণে পাঁচ মিনিট শাড়ি ভিজিয়ে রাখুন। তারপর পানি দিয়ে হালকা হাতে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। তোয়ালেতে শাড়িটা চেপে পানি শুষে ছায়ায় মেলে দিন।
- টাঙ্গাইলের সুতির শাড়ি আয়তাকারে ছোট ছোট ভাঁজ করে রাখতে পারেন। মাঝেমধ্যে উপরের শাড়ি নিচে এবং নিচের শাড়ি উপরে— এভাবে উল্টেপাল্টে দেবেন।
- নেট, সিল্ক আর জরির কাজের শাড়ি আলমারিতে ঠেসে রাখবেন না অথবা হ্যাঙারে ঝোলাবেন না। তাতে জরির কাজ, এমব্রয়ডারি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্লাস্টিকের ব্যাগে শাড়ি রাখলেও সূক্ষ্ম কাজগুলো কালচে হয়ে যাবে। আলমারিতে নরম কাপড়ের ঢেকে রাখুন এ ধরনের শাড়ি। বেনারসি, তসর, কাঞ্জিভরম ধরনের সিল্ক শাড়িও এভাবেই রাখবেন।
- হ্যাঙারে দুটো শাড়ি একসাথে রাখবেন না।
- পোকা থেকে বাঁচাতে সিল্কের শাড়ির কাছে ন্যাপথলিনের পরিবর্তে শুকনা মরিচ রাখতে পারেন।
- শাড়িতে তরকারির দাগ লাগলে সঙ্গে সঙ্গে ট্যালকম পাউডার বা লেবুর রস কিছুক্ষণ লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
- শিফন ও জর্জেট শাড়িতে সেফটিপিন আটকাবেন না।
- শাড়ির উপর সরাসরি সুগন্ধি স্প্রে করবেন না।
- ছত্রাক থেকে বাঁচতে আলমারিতে সিলিকা জেলের প্যাকেট রাখুন।
- মাসে এক বার ভাঁজ খুলে শাড়ি খোলা জায়গায়, ছায়ায় রাখুন। তারপর ভাঁজ বদলে রাখতে হবে। বেশি দিন একভাবে রাখলে ভাঁজে ভাঁজে সিল্কের পোশাক ফেঁসে যায়।
- পুরনো শাড়ির সঙ্গে পাকিয়ে পাকিয়ে মুড়ে কোলবালিশের মতো করে কভার পরিয়ে রাখা যেতে পারে দামি শাড়িগুলোকে।
- চেষ্টা করুন আলমারির অন্ধকারতম অংশে জরির শাড়িটি রাখতে। বেনারসি, তসর, ঘিচা, কাঞ্জিভরম প্রভৃতি সিল্ক এবং সব ডিজাইনার শাড়ি বা পোশাকের (পাঞ্জাবি, শার্ট, সালোয়ার নির্বিশেষে) ক্ষেত্রে এভাবেই যত্ন করতে হবে।
আপনার প্রিয় শাড়িগুলোর নিয়মিত যত্ন নিন যাতে দীর্ঘদিন তা সুন্দর থাকে। শাড়ি পরে শুধু স্টাইল করলে হবেনা, শাড়ির যত্ন নিন আর শাড়িতেই হয়ে উঠুন অনন্যা!
পোশাক বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ