বেনারসি শাড়ির সাত সতেরো
ফ্যাশন

বেনারসি শাড়ির সাত সতেরো

বেনারসি শাড়ি-

বেনারসি শাড়ি চেনার উপায় জানা না থাকলে, শাড়ি কিনে ঠকার সম্ভাবনা ১০০%। বেনারসি, নামেই আভিজাত্য। বিয়ে বাড়িতে কনের প্রথম পছন্দ এই বেনারসি। বিয়ে ছাড়াও যে কোন জমকালো অনুষ্ঠানে শাড়ি হিসেবে বেনারসির তুলনা নেই। আর তাই শাড়ি পছন্দ করে যেসব নারী তাদের পছন্দে বেনারসি সব সময়ই শীর্ষে। সুদূর প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান , বেনারসির চাহিদা কমেনি একটুও। এর উজ্জ্বল রঙ , বাহারি কারুকাজ মানুষের মন কাড়ে বেশি। আনন্দঘন মূহুর্ত যেন আরো একটু বেশি আনন্দঘন হয়ে উঠে বেনারসির বাহারে। তবে সুন্দর এই শাড়িটি কেনার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নয়তো এতো প্রিয় শাড়িটি কিনার সময় ঠকার সম্ভাবনা থাকে।

বেনারসি শাড়ির ইতিহাসঃ

বেনারসি শাড়ির মূল উৎপত্তি ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশের বেনারস শহরে। তবে, ঠিক কখন থেকে এ শাড়ি তৈরি হয়ে আসছে তা জানা যায় নি। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের কারণে অনেক বেনারসি তাঁতি সম্প্রদায় এদেশে এসে, ঢাকার বসতি স্থাপন করে। আর স্বাধীনতার পর এসব তাঁতিরা সবাই মিরপুর এলাকায় বসতি গড়ে তোলে। ধীরে ধীরে বাংলার লোকেরা এর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তাতিঁরা এর কাজ শুরু করেন। যুগে যুগে এর নকশায় এসেছে ভিন্নতা।বেনারসি শাড়ির পরিবর্তে এর নাম হয় কাতান।

বেনারসি শাড়িতে রঙের বৈচিত্র্যঃ

বেনারসি শাড়িতে রঙের বৈচিত্র্যের অভাব নেই। বিয়ের কনেকে লাল বেনারসিতেই সবাই কল্পনা করে থাকে। তবে, লাল ছাড়াও মেজেন্টা, মেরুন, হলুদ, বেগুনি, খয়েরি ইত্যাদি রঙের উপর সোনালি ও রুপালি জরি সুতার জমকালো ও ভারি কাজ থাকে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আজকাল আরো অনেক রঙের বেনারসি বের হয়েছে।

শাড়ির ধরন ও নকশার উপর ভিত্তি করে এর নানান নাম হয়ে থাকে। যেমন-

রেশমি কাতান

পিরামিড কাতান

চুনরি কাতান

প্রিন্স কাতান

ব্রোকেট কাতান

বেনারসি কসমস ইত্যাদি।

বেনারসি শাড়ির শুরুর দিকে ডিজাইন গুলো ছিল পার্সিয়ান মোটিফ। তারপর এতে আসে মোঘল মোটিফ। সময়ের সাথে সাথে এতে যুক্ত হয় পাবনার কিছু তাতিঁদের মোটিফ। আস্তে আস্তে এতে স্থানীয় কিছু নকশাও যুক্ত হয়।

বেনারসি শাড়ির তৈরি পদ্ধতিঃ

বেনারসি তৈরি করেন তাতিঁরা তাতঁ যন্ত্রের সাহায্যে। এই শাড়ি যেমন জমকালো তেমনি এর তৈরি প্রক্রিয়া ও বেশ জটিল। এর মূল উপাদান হলে কাঁচা রেশমি সুতা। পাশাপাশি এতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে জরি সুতা। শাড়ি তৈরি করার জন্য প্রথমে নকশা অনুযায়ী সুতা রং করা হয়ে থাকে। এরপর এই সুতা সাবান ও গরম পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকাতে হয়।

এরপর এই সুতা একত্রীকরণ করার জন্য পাঠানো হয় কারখানায়। এই সুতা দিয়েই চলে শাড়ি বুননের কাজ। শাড়ির ডিজাইন ও বুনন প্রক্রিয়া অনুযায়ী শাড়ি তৈরিতে সময় লাগে। মোটামুটি সহজ বুনন ও ডিজাইনের একটি শাড়ি তৈরিতে একজন তাতিঁর সময় লাগে প্রায় ৭ দিন।

আবার খুব বেশি কঠিন কাজ ও নিখুঁত বুননের জন্য তিনজন তাতিঁর সময় লাগে প্রায় তিন মাস। শাড়ি তৈরি করার পর একে পলিশ করা হয়ে থাকে। অনেক সময় তাতিঁরা দেশি রেশমি সুতার পরিবর্তে, চায়না সিল্ক সুতা ব্যবহার করে থাকেন।

বেনারসি শাড়ির যত্নঃ

বহুল আকাঙ্খিত ও দামি এই শাড়িটি কেনার পর এর যত্ন নিতে হবে খুব ভালো ভাবে। এত জমকালো নকশা ও ডিজাইন এর শাড়িটির যত্নে ও রয়েছে ভিন্নতা। বেনারসি শাড়ি সবসময় ড্রাই ওয়াশ করতে হবে। পানি বা ডিটারজেন্ট দিয়ে কখনোই এটি ধোয়া যাবে না।

আবার, শাড়িটিতে যদি কোন ভাবে দাগ লেগে যায়, তখন ওই স্থানে পানি দিয়ে ঘষা যাবে না। এতে শাড়ির ক্ষতি হতে পারে। তাই, এই দাগ তোলার জন্য প্রথমে অল্প পরিমানে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে হবে। তারপর সেখানে নেইলপলিশ রিমুভার ব্যবহার করতে হবে। তারপর সেই স্থানটি টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে ‍নিতে হবে।

বেনারসি শাড়ি চেনার উপায়ঃ

১. বেনারসি শাড়ি চেনার জন্য খুব বেশি দক্ষতার দরকার পড়ে না। শাড়িটিকে উল্টে দেখলেই হবে। আসল বেনারসি শাড়ির উল্টা পাশে ঘন সুতা দেখা যায় যেটা নকল বেনারসি শাড়িতে থাকে না। নকল বেনারসি শাড়ির উল্টা পাশ খসখসে হয়ে থাকে।

২. আসল বেনারসি শাড়িতে আচঁলে সবসময় ছয় ইঞ্চি থেকে আট ইঞ্চি মাপের লম্বা সমান সিল্কের প্যাচ থাকে কিন্তু নকল বেনারসি শাড়িতে এই প্যাচ থাকে না। শাড়ি পরিধান করার সময় এই অংশটি কাধেঁর উপর দিয়ে পড়ে তাই এটি খুব সহজেই লক্ষ্য করা যায়।

৩. একটি আসল বেনারসি শাড়ি সব সময় খুব উন্নতমানের সিল্ক সুতা ও ‍জরি সুতা দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। এই জরি সুতা সোনালি রঙ বা রুপালি রঙের হয়ে থাকে। এই সব সুতা খুব দামি হয়ে থাকে তাই শাড়ির দাম ও খুব বেশি হয়। একটি খাঁটি বেনারসি শাড়ি তৈরি করা খুব কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। একজন তাতিঁ একটি বেনারসি তৈরি করতে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস সময় নিয়ে থাকেন।

এই সমস্ত কারণে একটি আসল বেনারসি শাড়ি খুব দামি হয়ে থাকে। অন্য দিকে মেশিনে বোনা বেনারসি শাড়িতে এসব কিছুই থাকে না তাই সেটা অনেক কম দামে পাওয়া যায়। সিনথেটিক কাতান একটি শাড়ি যেমন পাওয়া যাবে ১৫০০ টাকা আবার কিছু কিছু শাড়ির দাম ৫০ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবার বিয়ের জন্য শাড়ি তৈরি করলে ওড়না সহ সেগুলোর দাম কয়েক লাখ পর্যন্ত হতে পারে।

৪. বেনারসি শাড়ি সাধারনত সিল্ক সুতা দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। তাই শাড়ি কেনার আগে সুতা আসল সিল্কের কিনা সেটা যাচাই করতে হবে। শাড়িটি হাতে নিয়ে ঘসা দিতে হবে। যদি তাতে গরম অনুভূত হয় তাহলে সেটা আসল সিল্ক।

৫. শাড়ি আসল নাকি নকল তা বুঝার জন্য রিং টেস্ট করা যায়। খাঁটি সিল্কের শাড়ি একটি আংটির ভিতর দিয়ে খুব সহজেই প্রবেশ করে থাকে। অন্যদিকে নকল শাড়িতে এই কাজটি সম্ভব হয় না।

৬. খাঁটি সিল্ক চেনার জন্য আরেকটি পরীক্ষা করা যায়। সিল্ক কে আগুনে পোড়ালে চুল পোড়া গন্ধ বের হয়। আর এর ছাই হয় কালো এবং ধরার সাথে সাথে গুড়া হয়ে যাবে।

৭. একটি আসল বেনারসি শাড়িতে মোঘল মোটিফ থাকবে যেমন আমরু, আমবি, দোমাক , বিভিন্ন ফুলের নকশা কিন্তু নকল বেনারসি শাড়িতে এই মোটিফ থাকবে না।

পোশাক বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *