চুলের যত্ন-
বর্ষাকালে আবহাওয়া আর্দ্র থাকার জন্য চুল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সৌন্দর্যের অন্যতম চাবিকাঠি হল সুন্দর চুল। আর এই বর্ষাকালে চুলের সমস্যায় নাজেহাল কমবেশি সবাই। বর্ষাকালে আবহাওয়া আর্দ্র থাকার জন্য চুল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৃষ্টিতে চুল ভিজে গেলে বাড়ি এসে চুল ভাল করে ধুয়ে নিন। নয়তো বৃষ্টির জল মাথায় বসে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাছাড়াও চুলে জট বাধতে পারে। বর্ষাকালে আবহাওয়া গুমোট থাকায় চুলের গোড়া ঘেমে যায়। এই ঘাম থেকেই খুশকি ও চুল ঝরা শুরু হয়। এই বর্ষায় মৌসুমে প্রকৃতি তার নতুন সবুজ প্রাণ পেলেও প্রাণহীন হয়ে পড়ে চুল। এই সময়টাতেই সব চেয়ে বেশি চুল ওঠা এবং চুলের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। চুল পড়া, খুসকি, ঘামাচি, স্ক্যাল্পে ইনফেকশন-সহ বিভিন্ন সমস্যা লেগেই থাকে। বর্ষা দিনগুলোতে চুলের যত্ন বেড়ে যায় দ্বিগুণ। তাই এই বর্ষা মৌসুমে নিতে হবে চুলের যত্ন। কারণ কখন যে আকাশ মুখ ভার করে বসে, কে জানে।
চলুন জেনে নিই বর্ষার চুলের যত্নের কয়েকটি উপায়ঃ-
রঙিন চুলের যত্নঃ
নারীরা চুলকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য কালো চুলকে বিভিন্ন রং দিয়ে রঙিন করে থাকে। আর এসমস্ত রঙে থাকে কেমিক্যাল। এতে চুলের হয় মারাত্মক ক্ষতি। তাই প্রয়োজন বিশেষ যত্নের। এর জন্য তেলের সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিলিয়ে চুলের গোড়ায় ভালভাবে মালিশ করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করুন এবং ডিপ কন্ডিশন করুন। বর্ষাকালে রঙিন চুলে হিট দেয়া থেকে বিতর থাকুন।
রিবন্ডিং করা চুলের যত্নঃ
রিবন্ডিং করা চুলের জন্য প্রোটিন প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। হেনার সঙ্গে ২ টি ডিম ডিম ফেটে, এর সাথে একটু মধু দিয়ে মিশিয়ে গোসলের আগে সারা চুলে দিয়ে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ান। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করলে চুল সোজা থাকে ও ঝরঝরে হবে।
শুষ্ক ও কোঁকড়া চুলের যত্নঃ
মেথি চুলের জন্য বেশ কার্যকরী। শুষ্ক ও কোঁকড়া চুলের জন্য ব্যবহার করতে পারেন মেথির হেয়ার প্যাক। এ জন্য প্রথমেই, মেথি কিছুক্ষন ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পানি ছেঁকে শুধু মেথি গুলা নিয়ে নিন। এখন এর সাথে পাকা কলা, ও সামান্য বাদাম তেল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। ৩০ মিনিট পর ভাল করে শ্যাম্পু করুন। এছাড়া আমলকির রস এবং চায়ের লিকার একসঙ্গে মিশিয়ে দিলে চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত হবে।
তৈলাক্ত চুলের যত্নঃ
তৈলাক্ত চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে গোসলের সময় শ্যাম্পু করার ১৫ মিনিট আগে চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। ঘনত্ব বাড়াতে টক দই ও মধু মিশিয়ে ৩০ মিনিট রেখে চিরুনি দিয়ে ৫ মিনিট উল্টো দিকে আঁচড়িয়ে শ্যাম্পু করুন। চুল শুকাতে হেয়ার ড্রায়ারের ঠান্ডা বাতাস ব্যবহার করুন। বর্ষাকালে প্রতিদিন বা এক দিন পরপর শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
চুল শুকনো রাখুনঃ
বৃষ্টির জল থেকে চুল বাঁচিয়ে রাখুন। কারণ বৃষ্টির জলে প্রচুর অ্যাসিড উপাদান থাকে, নোংরাও থাকে প্রচুর। তাই একান্ত ঝামেলায় না পড়লে বৃষ্টির জল চুলে না লাগতে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। বড়ো ছাতা বা হুড দেওয়া রেনকোট ব্যবহার করুন। যদি কোনো ভাবেই বৃষ্টির জল এড়াতে না পারেন, তা হলে বাড়ি ফিরে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগিয়ে নেবেন।
নিয়মিত তেল মাসাজ করুনঃ
শুধু ক্লান্তি দূর করে চনমনে করে তোলাই নয়, চুলের বৃদ্ধির জন্যও মাথায় তেলের মাসাজ ভীষণ উপকারী। চুলে নিয়মিত তেল ব্যবহার করলে তা স্ক্যাল্পকে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। চুলে তেল লাগালে শুষ্কতা দূর হয়, ডিপ কন্ডিশনিংয়ের সুফলও মেলে। তবে অতিরিক্ত তেল লাগাবেন না, পরিমাণমতো তেল চুলে লাগিয়ে সারা রাত রেখে পরের দিন শ্যাম্পু করে নেবেন। চুলে নিয়মিত তেল মাসাজ করলে, চুল সুন্দর ও নরম হয়, চুলের গ্রোথ ভালো হয়।
তাই চুলে তেল দেওয়ার আগে জেনে নিন কোন তেলের কী কী গুণ আছে আর কেনই বা সেটা আপনি ব্যবহার করবেন-
১। আমন্ড অয়েলঃ
আমন্ড অয়েলে আছে ভিটামিন ই। এই তেল স্ক্যাল্পে মাসাজ করলে হেয়ার ফলিকল মজবুত হয় এবং শুষ্ক চুলে আর্দ্রতা আসে। আর্দ্রতা বজায় থাকলে চুল শুষ্ক হওয়ার সমস্যাও আর হয় না। এই তেলের সঙ্গে সামান্য একটু অলিভ অয়েল মিশিয়ে মাসাজ করলে আরও ভাল ফল পাবেন।
২। সর্ষের তেলঃ
হ্যাঁ, রান্নার তেল বলে একে আপনি যতই হেলাফেলা করুন না কেন, এই তেলেরও অনেক গুণ আছে। টি ট্রি অয়েলের মতো এই তেলেরও অ্যান্টি ব্যাকটিরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান আছে। বর্ষাকালে যার বিশেষ প্রয়োজন আছে। তাছাড়া এই তেল সামান্য গরম করে চুলে মাসাজ করলে, হেয়ার ফলিকল মজবুত হয়।
৩। অলিভ অয়েলঃ
জলপাইয়ের তেলের কোনও তুলনা হয়না। প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিদ সমৃদ্ধ এই তেল মাথায় মাসাজ করলে, স্ক্যাল্পে পুষ্টি যায় এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়। অলিভ অয়েল দিয়ে হট অয়েল মাসাজ করে শ্যাম্পু করলে চুল নরম ও উজ্জ্বল হয়।
৪। নারকেল তেলঃ
বলাই বাহুল্য আমরা মাথায় যতগুলো তেল মাখি এটার ব্যবহার তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। নারকেল তেল কেন এত জনপ্রিয় জানেন? কারণ এই তেলে আছে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন ইত্যাদি। এগুলো আপনার স্ক্যাল্পে পুষ্টি যোগাবে এবং চুল গোড়া থেকে মজবুত করবে।বর্ষাকালে চুল নির্জীব ও ফ্রিজি বা জট পাকানো হয়ে যায়। প্রতিদিন নারকেল তেল মাখলে এই সমস্যা থাকবে না।
চুল শক্ত করে বাঁধবেন নাঃ
এই সময়ে চুল বেশি বাঁধলে ভিতরে আর্দ্রতা জমে থাকে, এজন্য চুল ভেঙ্গে পড়ে। চুল মুখে পড়লে একটা টপ নট বা একটা আলগা বিনুনিই যথেষ্ট। একটানা অনেকক্ষণ চুল বেঁধে রাখবেন না। অনেকে রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে গোড়া শক্ত করে চুল বেঁধে তবেই ঘুমতে যান। এতে চুল গোড়া থেকে উঠে আসে। চেষ্টা করবেন ঢিলেঢালা করে চুল বাঁধতে। শক্ত করে রাবার ব্যান্ড দিয়ে চুল বাঁধলে চুলের ক্ষতি হয়।
হেয়ার প্রোডাক্ট কম ব্যবহার করুনঃ
সকালে উঠেই মাথায় একগাদা সেরাম বা জেল লাগিয়ে নিলে কোনো লাভ হয় না। হেয়ার এক্সপার্টরা বলছেন যে, মাথার চুলে যত বেশি প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন চুলের ক্ষতি তত বেশি হবে। যদি সকালে বেরনোর আগে ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকাতে চান তাহলে চুলে হিট প্রোটেকটান্ট স্প্রে লাগিয়ে নেবেন। প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে হেয়ার স্টাইলিং প্রোডাক্ট লাগাবেন না। বরং চুল স্বাভাবিক রাখুন এবং প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করুন।
সঠিক চিরুনি ব্যবহার করুনঃ
মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান, তাতে জট ছাড়ানো সহজ হবে। কন্ডিশনার লাগানোর পরেও চিরুনি দিয়ে চুলের জট ছাড়িয়ে নিন, তাতে গোটা চুলে সমানভাবে কন্ডিশনার ছড়িয়ে যেতে পারবে। প্রচুর টাকা খরচ করেন চুলের পিছনে, অথচ সামান্য একটা বিষয় বারবার চোখ এড়িয়ে যায়। আর সেটা হল আমাদের চিরুনি। ভুল চিরুনি ব্যবহার করলেও চুলের ক্ষতি হয়, চুলে জট পড়ে যায় এবং চুল পড়তে শুরু করে।
ডিমের প্যাকঃ
ডিম চুলের প্রাকৃতিক প্রোটিন হিসেবে কাজ করে, যা চুল ঘন করে। বর্ষাকালে চুলের যত্ন নিতে নিয়মিত ডিমের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। একটি ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। পরিষ্কার চুলে হাতের আঙুল অথবা ব্রাশের সাহায্যে ওপর থেকে নিচের দিকে ধীরে ধীরে মিশ্রণটি লাগান। ডিমের প্যাক দিলে চুল জট বেঁধে যায়। এ জন্য মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল সাবধানে আঁচড়ে নিন। এরপর হালকা ঝুঁটি করে নিতে পারেন। চাইলে শাওয়ার ক্যাপ পরতে পারেন। আধাঘণ্টা রেখে চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন। ডিমের প্যাক দিলে চুলে আর আলাদা করে কন্ডিশনার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
মেহেদির প্যাকঃ
চুলের যত্ন নিতে মেহেদি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। বর্ষাকালে এই প্যাকও চুলের জন্য উপকারী। এক কাপ পরিমাণ শুকনো গুঁড়া মেহেদি অর্ধেক কাপ টক দই দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে এক দিন এমন প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। চুল ঘন, কালো ও লম্বা করতে মেহেদির তুলনা নেই।
রসুনঃ
প্রথমে রসুনের কয়েকটি কোয়া ছাড়িয়ে রাখুন। তারপর মিনিট পাঁচেক ওই রসুনের কোয়া আধকাপ অলিভ অয়েলের মধ্যে দিয়ে গরম করতে বসান। মিশ্রণ ঠাণ্ডা করে মাথার তালুতে মালিশ করুন। এরপর পানি দিয়ে খুব ভালো করে চুল ধুয়ে নিবেন। সপ্তাহে দুবার এভাবে পরিষ্কার করতে পারেন চুল।
পেঁয়াজ ঘষুনঃ
বর্ষাকালে চুল পড়ার সমস্যা অনেকের বেড়ে যায়। এটা কমাতে মাথার ত্বকে পেঁয়াজের রস লাগাতে পারেন। এতে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। যাঁদের চুল পাতলা তাঁরা সপ্তাহে দুই-তিন দিন ১০-১২ মিনিট মাথার তালুতে পেঁয়াজ ঘষতে পারেন। উপকার পাবেন।
অ্যালোভেরা জেলঃ
বর্ষাকালে চুলের যত্নে অ্যালোভেরা দারুণ কার্যকর। অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ৪ চামচ মধু মিশিয়ে চুলে এবং মাথার তালুতে লাগান। এর সঙ্গে যেকোনো ট্রিটমেন্ট ক্রিমও যোগ করতে পারেন। চুল ঘন করার সঙ্গে সঙ্গে এটি চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করবে।
সুন্দর চুলের পাশাপাশি স্টাইলের দিকটাও তো নজর দিতে হবে। সাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পোশাক। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চুলের স্টাইলে আনতে পারেন ভিন্নতা। মানুষ স্বভাবতই নিজেকে সুন্দর, পরিপাটি, আর গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করে। সুন্দর পোশাকে প্রতিটি মানুষই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে । একটি সুন্দর শালিন পোশাক, মানুষকে দৃশ্যত সত্যি’ই আরো সুন্দর ও মুগ্ধ করে তোলে। বর্ষায় চুলের যত্ন নিন এবং সুন্দর পোশাকের সাথে ঝলমলে চুল নিয়ে আপনি হয়ে উঠুন অপরূপা।
পোশাক বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ