গরমে আরামদায়ক পোশাক
ফ্যাশন

গরমে আরামদায়ক পোশাক

গরমে পোশাক পরার ক্ষেত্রে সবারই সচেতন হওয়া উচিত। প্রকৃতির পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও জীবনাচরণে পরিবর্তন আসে। পরিবর্তনের এ তালিকায় পোশাকের আরামটা খুবই জরুরি। অতএব, আবহাওয়ার সঙ্গে তাল-মিলিয়ে পোশাক না পরলে অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। ঋতু পরিবর্তনের সাথে ফ্যাশন এবং আরামের কথা মাথায় রেখে আমাদের পোশাকের রুচিতেও আসে ভিন্নতা। ফ্যাশনের সঙ্গে আবহাওয়ার সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষ করে আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে পোশাক বাছাই করার আগে অবশ্যই সেটি আবহাওয়া উপযোগী কিনা-এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। গরমের দিনে পোশাক অবশ্যই হতে হবে আরামদায়ক। সহজে ঘাম শুষে নেয়, বাতাস চলাচলে সক্ষম, ওজনে হালকা এবং তাপ থেকে সুরক্ষা দেয়- এমন তন্তুর পোশাক নির্বাচন করা প্রয়োজন। পোশাকের মাধ্যমে যেমন আপনি কতটা স্মার্ট তা প্রকাশ পায়, তেমনি আপনি কতটা স্বস্তিতে আছেন তা-ও বোঝা যায়। তাই গরমে স্বস্তি দিতে পারে এমন পোশাকই পরা উচিত। গরমের কথা মাথায় রেখে সবাই চান আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল পোশাক পরতে।

গরমে সুতির পোশাক আরামদায়ক। এখন সুতি কাপড় ও সুতির সঙ্গে লিনেনের মিশ্রণে আরামদায়ক পোশাক তৈরি করছে ফ্যাশন হাউসগুলো। বাইরে এখন বেশ গরম। তাই দরকার গরমে উপযোগী আরামদায়ক পোশাক। ডিজাইনাররাও বসে নেই। সুতি কাপড়ের নতুন নকশা ও থিমের পোশাক এনেছেন তাঁরা। গরমে হালকা রঙের পোশাকের প্রাধান্য বেশি। এবারও থাকছে হালকা রঙের পোশাকের প্রাধান্য।

হালকা ফেব্রিক এর পোশাক :

গরমের জন্য সুতি কাপড়ের বিকল্প নেই। এসময় ভারী কাপড় এড়িয়ে চলা উচিত। সুতি কাপড় কিংবা লিলেন কাপড় অনেক আরামদায়ক এবং পাতলা হয় যা সহজেই শরীরের ঘাম শুষে নিতে পারে। বাজারে নানান রকমের প্রিন্টের সুতি কিংবা লিলেন কাপড় পাওয়া যায় যা নিয়মিত ব্যবহারের উপযোগী। তবে অনুষ্ঠান এবং জায়গা বিশেষে কাপড়ের ধরণ পরিবর্তন করা যেতে পারে। কোনো অনুষ্ঠানে সুতি কাপড়ের পরিবর্তে শিফন কিংবা জর্জেটের কাপড়ের পোশাক করা যেতে পারে কারণ এই কাপড় গুলোও বেশ আরামদায়ক এবং দেখতেও বেশ সুন্দর লাগে।  

হালকা রঙের পোশাক:

গরমে হালকা রঙের পোশাক নির্বাচন করা উচিত। কারণ হালকা রঙের কাপড় রোদের তাপ কম শোষণ করে তাই বাইরের তাপমাত্রা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এসময় গাঢ় রঙের কাপড় নির্বাচন না করাই উত্তম। যতটুকু সম্ভব গাঢ় রং যেমন কালো,খয়েরি এইসব রঙের কাপড় এড়িয়ে চলা উত্তম। যেকোনো পোশাকের ক্ষেত্রে গরমের সময় সাদা, গোলাপি, আকাশি, নীল, বেগুনি , সবুজ রঙের পোশাক পরিধান করা উচিত। তাছাড়া হালকা রঙের কাপড় পরিধান করলে যেমন আরামবোধ হয় ঠিক তেমনি চোখেও এনে দেয় প্রশান্তি।

ঢিলেঢালা পোশাক:

গরমে ঢিলেঢালা পোশাক নির্বাচন করুন। সালোয়ার কামিজ ,কুর্তি কিংবা ফতুয়া যাই পরিধান করুন না কেন টাইট ফিটিং পরিধান না করাই উত্তম। একটু ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করলে আরামদায়ক লাগবে এবং শরীরে বাতাস চলাচল করতে সাহায্য করবে। কিন্তু ফিটিং কাপড় পরিধান করলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনি ঘামতে শুরু করবেন এবং ঘাম সহজে শুকাতেও  চায়না তাই শরীর আঠালো হয়ে থাকে। যার কারণে আপনাকে পড়তে হবে অস্বস্তিকর অবস্থায়। তাই যে ধরণের পোশাকই পড়ুন না কেন চেষ্টা করবেন যাতে পোশাকটি আরামদায়ক এবং ​ঢিলেঢালা হয়।  

সুতি:

গরমে সবচেয়ে আরামদায়ক প্রাকৃতিক তন্তু হল সুতি। এটা উচ্চ শোষণ ও বায়ুচলাচল ক্ষমতা সম্পন্ন। ওজনেও হালকা। গরমে হালকা রংয়ের সুতির পোশাক বেশ আরামদায়ক এবং সহজেই যে কোনো জায়গা পরে যাওয়া যায়। তাছাড়া সুতি কাপড় পরিষ্কার করা সহজ ও সময় সাশ্রয়ী।

লিনেন, ফ্লানেল, এন্ডির মিশ্রণ:

সুতি কাপড়ের সঙ্গে এখন অন্যান্য উপাদানের মিশ্রণ ঘটানো হচ্ছে। এতে সুতির পোশাকে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন বৈচিত্র্য। সুতির সঙ্গে প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণে লিনেন, ফ্লানেল, এন্ডির মতো আরামদায়ক কাপড়ও বোনা হচ্ছে। এতে সুতির পোশাক পাচ্ছে নতুন নতুন রূপ। এসব কাপড়ে তৈরি পোশাকগুলো আরো বেশি মসৃণ ও মজবুত হচ্ছে। পোশাকে নতুনত্ব আসছে। ব্যবহারেও আরাম ও বৈচিত্র্য যোগ হচ্ছে। এজন্য গরমে আরামদায়ক পোশাক পরার বিকল্প নেই। ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গরমে ক্যাজুয়াল পোশাক পরা উচিত। খেয়াল রাখতে হবে পোশাকটা যেন তাপ শোষণ করে কম। তাই প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য সুতি কাপড়ই আরামদায়ক।

এছাড়া লিনেন, দুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, চিকেন ও তাতের কাপড় গরমের জন্য বেশ উপযোগী। উৎসবে পরতে পারেন কৃত্রিম মসলিন বা পাতলা চোষা কাতান। গরমে চোখের আরাম বলেও একটা কথা আছে। সেদিক থেকে ভাবলে সাদা রঙই আদর্শ। তারপরও হালকা গোলাপি, জলপাই সবুজ, শ্যাওলা সবুজ, হালকা নীল, হালকা হলুদ, ঘিয়ে এসব রঙের হালকা শেড এবং টারশিয়ারি রঙগুলোও গরমে উপযোগী। কালো বা গাঢ় রঙের পোশাক একেবারেই নয়। কারণ এসব রঙ অতিরিক্ত তাপ শোষণ করে।

জেনে নিন গরমে কেমন ঘরানার পোশাক পরবেন-

১। গরমে টি-শার্ট ব্যবহারের বিকল্প নেই। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সবার জন্যই সবচেয়ে আরামদায়ক পোশাক হলো টি-শার্ট। তবে কাপড়ের ধরন ও হালকা রং দেখে গরমে টি-শার্ট পরবেন।

২। ফ্যাশনে ফতুয়ার জনপ্রিয়তা অনেক। গরমে নারী-পুরুষ সবাই জিন্সের সঙ্গে ফতুয়া পরতে পারেন। এ ছাড়াও নারীরা ফতুয়ার সঙ্গে ধুতি সেলোয়ার, পালাজো বা স্কার্ট ও পরতে পারবেন। এসময় হালকা রঙের উপর বিভিন্ন সুতার কারুকাজ করা ফতুয়া বেছে নিতে পারেন।

৩। কুর্তি বর্তমানে সব নারীই পরতে পছন্দ করেন। লম্বা কামিজ অথবা গোল হলেও আরামদায়ক হয় কুর্তি। রং ও ডিজাইনের পার্থক্যে সুতি বা হালকা ফেব্রিক্সের কুর্তি পরতে পারেন গরমে।

৪। অনেকেই নিয়মিত শাড়ি পরে অফিস করেন। আবার বিশেষ দিনগুলোতেও নারীরা শাড়ি পরে থাকেন। সেক্ষেত্রে সুতির ছাপা শাড়ি, ব্লক, টাঙ্গাইলের শাড়ি অথবা ব্লক-বাটিকের সুতি ট্রেন্ডি শাড়ি, অ্যাপ্লিকের শাড়ি পরতে পারেন। ব্লাউজের ক্ষেত্রে পেছনের গলা বড় রাখতে পারেন। থ্রি-কোয়ার্টার বা হাফ হাতা হলেও বেশ আরামদায়ক হবে। সেই সঙ্গে গরমে স্বস্তি পেতে হালকা রংয়ের শাড়ি পরুন।

৫। অলঙ্কার আপনার শরীরে তাপদাহ সৃষ্টি করতে পারে। তাই বাড়তি অলঙ্কার যত কম পড়া যায় ততই ভালো।

৬। গরমে হালকা রঙের পোশাক ব্যবহার করুন। হালকা নীল, সাদা, গোলাপি, লেমন কালার, হালকা বেগুনি, আকাশি–এসব রঙের পোশাকই গরমে আরামদায়ক।

৭। সুতি কাপড় খুবই হালকা হওয়াতে দেখতে বেশ সুন্দর ও আরামদায়ক লাগে। তাই গরমে পোশাক নির্বাচনে সুতি কাপড় থাকতে পারে পছন্দের শীর্ষে।

৮। পোশাকে যতটা সম্ভব বাতাস চলাচল নিশ্চিত করতে পারলেই গরম ও ঘাম থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সেই লক্ষ্যে হাফ স্লিভ কিংবা লুজ স্লিভ পোশাক পরা যেতে পারে।

৯। টাইট যেকোন ধরনের পোশাক পরা থেকে বিরত থাকতে হবে। টাইট যেকোন পোশাকই শরীরে অস্বস্তি সৃষ্টি করার পাশাপাশি শরীরে বায়ু চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে; ফলে শরীরে ঘামের উৎপত্তি হয়।

১০। জাম্প স্যুট, লম্বা শার্ট ঘরানার পোশাকও গরম আবহাওয়ায় স্বস্তি দিতে পারে। বর্তমানে এ পোশাকগুলোও বেশ ট্রেন্ডি। তবে অবশ্যই স্থান বুঝে কাপড় নির্বাচন করতে হবে। প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য সুতি ও লিলেন কাপড়ের পোশাক পরতে পারেন।

১১। শ্যু, কনভার্স কিংবা জুতোর পরিবর্তে স্যান্ডেল পড়া উচিৎ। এতে করে পা ঘামিয়ে যায় না।

১২। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছেলেরা বেছে নিতে পারেন হালকা রঙের সুতি পাঞ্জাবি। এছাড়া গরমে ছেলেদের জন্য সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক পোশাক হচ্ছে টি শার্ট। বিশেষ করে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেরা জিন্স,গ্যাবাডিন কিংবা অন্যান্য প্যান্টের সঙ্গে টি-শার্ট পড়তে পারেন।  

রোদের তাপ দিনকে দিন বাড়ছেই। আবহাওয়া প্রচণ্ড উত্তপ্ত এখন। গরমে পোশাক পরার ক্ষেত্রে সবারই সচেতন হওয়া উচিত। কারণ পোশাকের ধরন ও ব্যবহার সঠিক সময়ে না করলে তা আপনার জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

পোশাক বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *