বিনুনি-
চুল সাজানোর চলতি ধারায় আবার এসেছে বিনুনি এর জনপ্রিয়তা। মেয়েদের মাথার চুলে বেণির স্টাইল বহু বছরের পুরোনো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাতে সংযোজন যেমন হয়েছে, বিয়োজনও ঘটেছে। বেণির বাঁধনে একালের তরুণীরাও মাথা সাজান। আজকাল চুলের বেণীর স্টাইলগুলোই খুব মানাচ্ছে নতুন নতুন ফ্যাশন গুলোর সাথে; কেননা হাল আমলের ডিজাইন করা পোশাক-পরিচ্ছদের সাথে চুলের বেণীর সাজসজ্জাটাই এ যুগের ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সময়ে এসে শুধু শাড়িই নয়,কুর্তি, কামিজ, টপ—এমনকি টি-শার্টের সঙ্গেও বেণি বাঁধেন অনেকেই। ইদানীং অনেক তারকার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বেণি বাঁধা চুলের ছবি দেখা যাচ্ছে। একটা সময় ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেয়ের মাথায় তেল দিয়ে চুল টেনে বিনুনি বাঁধার কাজটা মায়েরা করতেই বেশি ভালোবাসতেন। খেজুর বেণি, কলা বেণি, ফিতা বেণি—অনেক নামের বেণিতে তখন বাঁধা পড়ত চুল। স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁধে নেওয়া এই চুলের বাঁধন বেণি হাল ফ্যাশনেও পেয়েছে জনপ্রিয়তা। শুধু এক ঘরানার বেণি নয়, একই চুলে ফুটে উঠছে নানা নকশার বেণি। পুরো চুলে বেণি বাঁধা তো আছেই, খোলা চুলেও নানা আঙ্গিকে জনপ্রিয় হচ্ছে এই বেণির স্টাইল। দেশীয় সংস্কৃতির উৎসবগুলোতে বেণি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে যায়, এমন লম্বা বেণিতে ফুল গুঁজে সাজার দৃশ্যটা বেশ চোখে পড়ে তখন।
বেণিতে ভিন্নতা
আগ্রহটা বেশি কিশোরী বা তরুণীদের মধ্যে। এই এক বেণিকেই নানা স্টাইলে বাঁধছে। একটু অগোছালো বা হালকা করে বাঁধা বেণিগুলো এই বয়সের সঙ্গে মানানসই বেশি। পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গেও মানিয়ে যায়। অন্যদিকে নিপাট ভদ্রভাবে বাঁধা পুরোনো আমলের বেণিগুলো চলে যাবে দেশীয় পোশাকের সঙ্গে। বেণি কখনোই পুরোনো হওয়ার নয়। যুক্তরাষ্ট্রের হপি সম্প্রদায়ের বিবাহিত নারীরাই শুধু চুলে বেণি করতে পারেন। বেণির নামেও আছে ভিন্নতা। ফ্রেঞ্চ বেণি, ফিশটেইল বেণি, ডাচ বেণি, চার দড়ির বেণি, মোড়ানো বেণি, ওলটানো বেণি ইত্যাদি। একই বেণি উপস্থাপন করা হয় নানা আঙ্গিকে। মজাটা এখানেই। কানের দুই পাশে বাঁধা গতানুগতিক বেণিগুলোকে যখন এক কান থেকে আরেক কানের পেছনে রিবন দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়, নাম হয়ে যায় কান বেণি। এই গতানুগতিক বেণিটাকেই যখন গোল করে মোড়াতে থাকবেন, গোলাপের মতো হয়ে যাবে। এই বেণি দিয়েই চার কোনা ঘর করে ফেলতে পারবেন পুরো চুলজুড়ে। স্টাইলের শেষ নেই। আছে শুধু শুরু। লম্বা মুখে যখন বেণি করবেন, এক পাশে সিঁথি করে করুন। এতে লম্বাটে ভাবটা কমে যাবে। আবার গোল চেহারার জন্য চুল কিছুটা ছেড়ে ছেড়ে বেণি করা যেতে পারে। মুখের ফোলা ভাব কম লাগবে।
সোজা বেণি
এটি সাধারণ একটি বেণী। বাঙালী নারীদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য। এর প্রধান সুবিধা হলো চুল ভালো থাকে। বাইরের ধুলোবালিতে চুল, ত্বকের সুরক্ষা করা বেশ ঝামেলাপূর্ণ। চুল ছেড়ে রাখলে দ্রুত নষ্ট হয়। তবে বেণি করলে এ ভয় থাকে না। সোজা বিনুনি করতে হলে প্রথমে সবগুলো চুলকে তিনটি অংশে ভাগ করতে হয়। তারপর একভাগ এনে মধ্যভাগের সাথে মিলিয়ে তারপর তৃতীয় ভাগ মধ্যভাগের সাথে মিলিয়ে চমৎকারভাবে বেণী করা যায়। এমনভাবে শেষ না হওয়া অব্দি করে যেতে হবে।
ফ্রেঞ্চ বেণি
যেকোনো উৎসব, অনুষ্ঠানে ফ্রেঞ্চ বিনুনি করলে অন্যরকম সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। এটি খুব জনপ্রিয়। বাংলায় ফ্রেঞ্চ বেণি নামে পরিচিত হলেও হিন্দিতে এটি সাগার চৌটি নামে পরিচিত। ‘ইসাক জাদে’ সিনেমায় পারিনীতি চোপড়া ফ্রেঞ্চ বেণি করে বিভিন্ন ভঙ্গিমার অভিনয় করেছেন। যেকোনো অনুষ্ঠানে গেলে আপনি যদি ফ্রেঞ্চ বেণি করে যেতে চান তাহলে ইউটিউব থেকে এর কৌশলগুলো শিখে নিতে পারেন।
ক্রাউন বা মুকুট বেণি
ক্রাউন বেণিটি বেশি সুপরিচিত নয়। এটি করার জন্য অনেক লম্বা চুল হতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। মাঝারি চুলেও করা যাবে। দিনে কিংবা সাধারণ কোনো প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য ক্রাউন বেণি করার প্রস্তুতি না নেয়াই ভালো। তবে আপনার হাতে যদি যথেষ্ট সময় থাকে তাহলে এটি করতে পারেন।
ফিশটেল বেণি
ফিশটেল বেণি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া কর্মজীবী নারীদের কাছেও গ্রহণযোগ্য। ওয়েস্টার্ন পোশাকের সাথে এই এটি খুব মানায়। আপনি চাইলে গাউনের সাথেও ফিশ টেল বেণি করতে পারেন। সব ধরনের পোশাকের সাথে এটি চমৎকার মানায়। একপাশে ফিশটেল বেণি করার প্রচলনটাই বেশি। তবে যদি স্টাইলে ভিন্নতা আনতে চান, তাহলে চুলের সামনের অংশে সামান্য ফুলিয়ে ক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে পেছনের অংশে ফিশটেল বেণি করতে পারেন।
বেণির তিনটি ভাগকে তুলনা করা হয় শারীরিক, মানসিক ও আত্মিকতার সঙ্গে। এই তিন যখন এক হয়ে যায়, তখন চমৎকার কিছু হবে, এমনটাই তো স্বাভাবিক। তখন তা হয়ে ওঠে অনন্যসাধারণ।
পোশাক বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ